জেনে নিনঃ নামজারি ,পরচা , দাগ ,খতিয়ান ,মৌজা ,তফসিল ,জমা ,খারিজ ,খাজনা ,দাখিলা , C.S এবং R.S

জমিজমার হিসাব-নিকাস


মৌজা: ভূমি জরিপের ভৌগলিক ইউনিটকে মৌজা রাজস্ব নির্ধারণ এবং রাজস্ব আদায়ের জন্য এক ইউনিট জমির ভৌগোলিক আভিব্যক্তি হলো মৌজা। একটি মৌজা আনুমানিক ভাবে একটি গ্রামের সমান বা এর চেয়ে কিছুটা ছোট-বড় হয়।ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভের(CS) সময়ে এক একটি মৌজা এলাকাকে পৃথকভাবে পরিচিতি নম্বর নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।বাংলাদেশে মোট মৌজার সংখ্যা হচ্ছে ৬৯,৯৯০ টি।

দাগ নম্বর:– একটি মৌজার বিভিন্ন মালিকের বা একই মালিকের বিভিন্ন শ্রেণিভূক্ত জমিকে নকশায় যে পৃথক পরিচিতি নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয় তাকে দাগ বলে। মৌজা মাপের উত্তর-পশ্চিম কোন থেকে দাগ নম্বর প্রদান শুরু হয় এব দক্ষিন-পূর্ব কোনে এসে শেষ হয়।

দাখিলা:– ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের পর তহসিল অফিস হতে ভূমি মালিককে যে রশিদ দেয়া হয় তাকে দাখিলা বলে।

পর্চা:- জরিপের খানাপুরি স্তর পযন্ত কাজ শেষ করে খসড়া খতিয়ান প্রস্তুত করে এর অনুলিপি মালিকের নিকট বিলি করা হয়। খতিয়ানের এই অনুরিপি ‘পর্চা’ নামে পরিচিত।

খতিয়ান:-একটি মৌজায় এক বা একাধিক ভূমি মালিকানার বিবরণ তথা ভূমির পরিমান, শ্রেণি,হিস্যা ইত্যাদি যে পৃথক পরিচিতি নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।
হাল খতিয়ান:– কোন এলাকার সর্বশেষ জরিপে খতিয়ানের রেকর্ড প্রস্তুত হওয়ার পর সরকার দ্বারা বিঙ্গপ্তির মাধ্যমে ঘোষিত হয়ে বর্তমানে চালু আছে এমন খতিয়ানকে হাল খতিয়ান বলে।

সাবেক খতিয়ান: হাল খতিয়ানের পূর্ব পযন্ত চালু খতিয়ানকে সাবেক খতিয়ান বলে,যা বর্তমানে চালু নেই।তবে এর গুরুত্ব অনেক বিধায় এর সংরক্ষন দরকার।

সিএস খতিয়ান: সিএস খতিয়ানের পূর্ণরুপ Cadastral Survey (দেশব্যাপি জরিপ) খতিয়ান।১৯১০-১৯২০ সালে জরিপ করে এই খতিয়ান তৈরী করা হয়েছিল।

এসএ খতিয়ান: এসএ খতিয়ান এর পূর্নরুপ State Acquisition (রাষ্ট্রকতৃক অর্জন) খতিয়ান। টেস্ট একুইজিশন এন্ড টেনেন্সি আইন প্রণয়ন করে ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করা হয়। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পর যে খতিয়ান তৈরী করা হয় তাকে বলে এসএ খতিয়ান। ১৯৫৬ সালের জরিপে এ খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়।
আরএস খতিয়ান: আরএস-এর অর্থ হলো Revisional Settlement বা সংশোধণী জরিপ।এসএ খতিয়ানের পর ঐ আইনের ১৪৪ ধারা অনুসারে যে খতিয়ান প্রকাশিত হয় (বা হবে) তাকে আর এস খাতয়য়ান বলে।

হোল্ডিং নম্বার:- খতিয়ান শব্দের অর্থ যা হোল্ডিং শব্দের অর্থ তাই। ১৯৫০ সালে State Acquisition(SA) আইন অনুসারে ‘হোল্ডিং’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

ভূমি অধিগ্রহন:- কোন স্থবর সম্পত্তি সরকারী প্রয়োজনে বা জনস্বার্থে আবশ্যক হলে উক্ত সম্পত্তি জেলা প্রসাসক কতৃক বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহনের বিধান ভূমি অধিগ্রহন নামে পরিচিত।

অর্পিত সম্পত্তি: ১৯৫৬ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় যেসব পাকিস্থনি নাগরিক দেশ ছেড়ে ভারকে গমন করে পাকিস্থান প্রতিরক্ষা সার্ভিস কতৃক বিধি মোতাবেক তাদের শত্রু বলে ঘোসণা করা হয় এবং তাদের এদেশে রেখে যাওযা সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি বলে। ১৯৭৪ সালে উক্ত সম্পুত্তিকে অর্পিত সম্পত্তি নামকরণ করা হয়।

জমির পরিমাপ:-কোন অজানা কারনে বাংলাদেশে ভূমি সংক্রান্ত যে কোন কাজই কঠিন ও পেঁচানো।এক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা হল দেশের একেক জাইগায় একেক পরিমানগত ভিত্তির উপর নির্ভর করে ভূমি পরিমাপ করা হয়।তবে সর্বজজৱনগ্রাহ এ সরকার ঘোষিত পরিমান পদ্ধাতি নিচে উটস্থাপন করা হর;
ভূমি পরিমপ করা হয়- ক. ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক, খ. কাঠা, গ. বিঘা ও ঘ. এককের ভিত্তিতে।

ভূমি যদি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ৪৮৪০ বর্গগজ হয়, তাহলে ১ একর হবে।যেমন: দৈর্ঘ্য ২২০ গজ এবং প্রস্থ ২২ গজ।সুতরাং ২২০*২২ গজ=৪৮৪০ বর্গগজ বা এক একর।
বর্গগজ,শতাংশ ও এককের পরিমান:
৪৮.৪০ বর্গগজ =১ শতাংশ
২৪২.০০ বর্গগজ = ৫শতাংশ
৪৮৪.০০ বর্গগজ = ১০ শতাংশ
২৪২০ বর্গগজ = ৫০ শতাংশ
৪৮৪০ বর্গগজ = ১০০ শতাংশ(১ একর)
১০০ বিঘা = ৩৩.৩৩ একর।

ভুমি সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দ

ভূমি সংক্রান্ত সাধারণ কিছু তথ্য বা শব্দাবলি আমরা প্রায়ই ব্যবহার করি কিন্তু তার সঠিক ইতিহাস বা অর্থ অনেকের জানা নেই। আসুন জেনে নেই এমন কিছু শব্দের উৎপত্তি, ইতিহাস ও ব্যবহার।
২। ভূমি জরিপ:
জরিপ তথা ইংরেজী ঝঁৎাবু শব্দটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। ভূমি জরিপ বলতে বিভিন্ন মৌজা তথা গ্রাম বা সীমানা ভিত্তিক নকশা তৈরি বা জমির মালিকানা সংক্রান্ত পুরাতন রেকর্ড পর্যালোচনা বা যাচাই বাছাইকে বুঝায়। অর্থাৎ সহজ ভাষায় জরিপের সময় পুরাতন তৈরীকৃত নকশা ও রেকর্ড সংশোধন করা এবং জমির আকৃতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে থাকলে বা মালিকানার পরিবর্তন হয়ে থাকলে সেই মোতাবেক সামঞ্জস্য রেখে মৌজা বা সীমানার মধ্যে জমির নকশা এবং কাগজ পত্রের রেকর্ড তৈরি করাকে বুঝায়। আইনের ভাষায় বলা যায়, জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০, সার্ভে এন্ড সেটেলমেন্ট (এস.এস.) ম্যানুয়াল-১৯৩৫, সার্ভে এক্ট ১৮৭৫, প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫, এবং অপরাপর জরিপ আইনের বিধান মতে মৌজা ভিত্তিক ভূমির রেকর্ড তথা খতিয়ান ও নকসা প্রস্তুতের কার্যক্রমকে ভূমি জরিপ বলা হয় ।

৩।নকশা:
নকশা হলো কোনো মৌজাভুক্ত ভূমির বাস্তব চিত্র বা ভূ-চিত্র।

৪।মৌজা:
মৌজা হলো জরিপের একটি ভৌগোলিক ইউনিট। একটি ইউনিয়নকে কয়েকটি মৌজায় বিভক্ত করে এ ভৌগলিক ইউনিট করা হয়।

৫। জেএল নম্বর:
উপজেলার অন্তর্গত মৌজা সমূহের পরিচিতমূলক ক্রমিক নম্বরকে জেএল নম্বর বা জুরিসডিকশন লিস্ট নম্বর বলে । মৌজার উত্তর পশ্চিম কোণ থেকে শুরু করে পূর্ব-দক্ষিণ কোণে গিয়ে এ নম্বর দেয়া শেষ করা হয়।

৬।খতিয়ান:
খতিয়ান হলো দখল স্বত্বের প্রামাণ্য দলিল। এক বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ বা আংশিক ভূমি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে সরকার বা রাজস্ব অফিসার কর্তৃক যে ভূমি স্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। প্রতি খতিয়ানের একটি পৃথক পরিচিতি নম্বর থাকে। খতিয়ানকে “রেকর্ড অব রাইটস” বা “স্বত্বলিপি” বলা হয়। খতিয়ান হচ্ছে নিখুঁত মালিকানা স্বত্ব ও দখলী স্বত্বের প্রমাণ্য দলিল। খতিয়ানে তৌজী নম্বর, জেএল নম্বর, স্বত্বের বিবরণ, মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা থাকে। খতিয়ানের অপর পৃষ্ঠায় দাগ নম্বর, প্রত্যেক দাগের উত্তর সীমা (উত্তর দাগ), ভূমির শ্রেণী দখলকারের নাম, ভূমির পরিমাণ, হিস্যা, হিস্যা মতে পরিমাণ লেখা থাকে। উপযুক্ত আদালত বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভুল প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত খতিয়ান নির্ভূল হিসাবে গণ্য হতে থাকে।

৭। দাগ নম্বর:
একটি মৌজার বিভিন্ন মালিকের বা একই মালিকের বিভিন্ন শ্রেণীভুক্ত ভূমিকে নকশায় যে পৃথক পরিচিতি নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয় তাকে বলে দাগ নম্বর।

৮। বাটা দাগ:
নকশায় ভুল বসত কোনো প্লট এর দাগ নম্বর বাদ পড়লে, শেষ প্লট নম্বরটির পরের নম্বরটি নিচে লিখে এবং বাদ পড়া প্লটের নম্বরটি উপরে লিখে (ভগ্নাংশের ন্যায়) প্রাপ্ত যে নম্বর পাওয়া যায় তা দিয়ে বাদ পড়া প্লটটি চিহ্নিত করা হয় তাকে বাটা দাগ বলে।

৯। ছুট দাগ:
নকশায় দাগ নম্বর বসানোর সময় ভুল বসতঃ কোনো একটি অংক/সংখ্যা বাদ পড়লে অর্থাৎ ছুটে গেলে তাকে ছুট দাগ বলে। যেমন ১, ২, ৩ বসানোর পর ৫ ও ৬ বসিয়ে ফেলা এখানে ৪ ছুট দাগ। অর্থাত ঐ নকশায় ৪ নম্বর নামে কোন প্লটের অস্তিত্ব নেই।

১০। পর্চা:
জরিপ চলাকালীন সময়ে বুজারত স্তরে ভূমি মালিককে প্রস্তুতকৃত খসড়া খতিয়ানের যে অনুলিপি দেয়া হয় তাকে পর্চা বলে। পর্চা জরিপ কর্মচারী কর্তৃক অনুস্বাক্ষরিত হওয়া উচিত।

১১। হাল্ডিং:
একটি খতিয়ানে একটি দাগ থাকতে পারে আবার একাধিক দাগও থাকতে পারে। এরূপ একটি খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত ভূমিকে হোল্ডিং বা জোত-জমা বলে। হোল্ডিং এর পরিচিত নম্বরকে হোল্ডিং নম্বর বলে।

১২। দাখিলা:
ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের বিপরীতে প্রদত্ত রসিদকে বলে দাখিলা বা আরআর (রেন্ট রিসীট) দাখিলা ভূমি মালিকানা প্রমাণের প্রাথমিক দলিল।

১৩। ডিসিআর:
ভূমি উন্নয়ন কর ব্যতিত অন্যান্য সরকারী পাওনা আদায়ের জন্য যে রসিদ দেয়া হয় তাকে ডিসিআর (ডুপিকেট কার্বন রিসীট) বলে।

১৪। ফিল্ড বুক:
জরিপের প্রয়োজনে কিস্তোয়ার কালে অফসেট গ্রহণসহ চলমান চেইনের রিডিং লিখনের জন্য যে বই ব্যবহৃত হয় তাকে ফিল্ড বুক বলে। এটি দেখে পরবর্তীতে টেবিলে পি-৭০ সীটে স্বহস্তে নকশা অংকন করা হয়।

১৫। জরিপকালে ব্যবহৃত কালি/ (রং) এর বিবরণ:
ক) খানাপুরী স্তরে ব্যবহার করতে হবে কালো কালি
খ) বুজারত স্তরে ব্যবহার করতে হবে সবুজ কালি
গ) তসদিক স্তরে ব্যবহার করতে হবে লাল কালি
ঘ) আপত্তি স্তরে ব্যবহার করতে হবে বু-কোবাল্ট কালি
ঙ) আপিল স্তরে ব্যবহার করতে হবে কালো কালি

১৬। পেরীফেরী:
হাট বাজারের আয়তন প্রতিয়নত সম্প্রসারিত হয়ে থাকে। এরূপ সম্প্রসারিত অংশকে বাজারের অন্তর্ভূক্ত করা, হাট-বাজারের তোহামহাল, চান্দিনা ভিটি ও বন্দোবস্তযোগ্য খাসজমি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে সার্ভেয়ার দ্বারা সরজমিনে পরিমাপপূর্বক হাট-বাজারের নক্সা তৈরীসহ চর্তুসীমা নির্ধারণ করাকে বলে পেরীফেরী।

১৭। নালজমি:
আবাদযোগ্য সমতল জমিকে নাল জমি বলে।

১৮। তৌজি:
১৭৯৩ সালে প্রবর্তীত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তীয় ভূমির জন্য কালেক্টরীতে যে রেজিস্ট্রি বই থাকতো তাকে তৌজি বলে। প্রত্যেকটি তৌজিরই ক্রমিক নম্বর থাকে। জমিদারের অধীনে প্রজার জোতকেও তৌজি বলা হতো।

১৯। কটকবলা:
সুদের পরিবর্তে মহাজনের দখলে জমি দিয়ে ঋণ নিয়ে যে দলিল দেয়া হয় তাকে কটকবলা বলে। খাতক যতদিন টাকা পরিশোধ করবে না ততদিন মহাজন এ জমি ভোগ দখল করতে থাকে।

২০। চান্দিনা:
বাজারের ভিটি ভূমিকে চান্দিনা বলা হয়। এটি মূলত দোকানদারের হোল্ডিং।

২১। জমা বন্ধী:
খাজনার তালিকাকে জমা বন্ধী বলে।

২২। চালা ভূমি:
নালের চেয়ে উঁচু আবাদী ভূমি, পুকুরের পাড় ইত্যাদি রকম ভূমিকে বলে চালা।

২৩। হালট:
জমিজমার মধ্যবর্তী চওড়া আইল বা পথ যার উপর দিয়ে চাষী হাল বলদ নিয়ে চলাফেরা করে। হালটকে গোপাটও বলা হয়।

২৪। চর্চা জরিপ:
চর্চা অর্থ চর পয়স্থি জমি বা চরের জরিপকে বলে চর্চা জরিপ। এই জরিপ করে যে নকশা তৈরি করা হয় তাকে চর্চা নকশা বলে।

২৫। তফসিল:
কোনা জমি যে মৌজায় অবস্থিত সে মৌজার নাম, জেএল নম্বর, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির শ্রেণী, পরিমাণ, জমির চৌহদ্দি বর্ণনা ইত্যাদি পরিচিতি সম্বলিত বিবরণকে ঐ জমির তফসিল বলে।

২৬। বাইদ:
নীচু কৃষি জমিকে বাইদ বলে।

২৭। নয়ন জুলি:
বাঁধ সংলগ্ন নীচু জলা ভূমিকে বলে নয়ন জুলি।

ভুমি বিষয়ে সাধারণ কিছু শব্দাবলির তথ্য

বাংলাদেশের অপরাধ পরিসংখ্যানে দেখা যায় প্রায় ৬০% ফৌজদারী মামলার উদ্ভব হয় ভুমি সংক্রান্ত ঘটনা বা ঘটনার জের থেকে। ভুমি নিয়ে সাধারন জনগনের অজ্ঞতা, কিছু প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজস ও অন্যায় লাভে ভুয়া কাগজ-পত্র সৃষ্টি এবং সম্পদলোভী অপরাধীচক্রের অপকর্মের কারনে এসব অপরাধ প্রায়সই ঘটে থাকে। ভুমি সংক্রান্ত সাধারন কিছু তথ্য বা শব্দাবলি আমরা প্রায়ই ব্যবহার করি কিন্তু তার সঠিক ইতিহাস অনেকের জানা নেই। আসুন জেনে নেই এমন কিছু শব্দের উৎপত্তি, ইতিহাস ও ব্যবহার।
C.S (Cadestral survey)- ১৮৮৮ খ্রিঃ সাল থেকে ১৯৪০ খ্রিঃ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের তত্ববধানে বাংলায় একটি ভুমি জরিপ হয় যাহাকে সিএস জরিপ বলে। রামু থানা থেকে শুরু হয়ে দিনাজপুরে এ জরিপ শেষ হয়। এটাই ব্রিটিশ ভারতের প্রথম ভুমি জরিপ। এই জরিপে কৃত নক্সাকে সিএস নক্সা, খতিয়ানকে সিএস খতিয়ান বলে।
R.S(Revision survey)- ১৯৪০ খ্রিঃ সাল থেকে ১৯৫২ খ্রিঃ সাল পর্যন্ত সিএস জরিপের সংশোধনী জরিপকে আরএস জরিপ বলে। ফরিদপুর, খুলনা ও বাকেরগঞ্জে এ জরিপ চলাকালে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক বাংলা থেকে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ করেন। এই জরিপে কৃত নক্সাকে আর,এস নক্সা, খতিয়ানকে আর,এস খতিয়ান বলে।
S.A(State aquisition)– জমিদারী উচ্ছেদ হবার পর ১৯৫৬ খ্রিঃ সাল থেকে ১৯৬৩ খ্রিঃ সাল পর্যন্ত জমিদারদের নিকট থেকে অধিগ্রহণকৃত ভু-সম্পত্তির হিসাব নির্ণয়ের জন্য যে জরিপ করা হয় তাকে এস,এ জরিপ বলে। এই জরিপে কৃত নক্সাকে এস,এ নক্সা, খতিয়ানকে এস,এ খতিয়ান বলে।
R.S(Revision survey)– এস,এ জরিপের পর ১৯৬৫ সালে রাজশাহী হতে শুরু হয় ২য় আর,এস। এটি তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানব্যপি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকা শহর জরিপে এসে আইনী জটিলতার কারনে এ প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে। এই জরিপে কৃত নক্সাকে আর,এস নক্সা, খতিয়ানকে আর,এস খতিয়ান বলে।
D.C.R(Duplicate carbon receipt)– উন্নয়ন কর বহির্ভুত সরকারী আয়ের জন্য দেয় যা দাখিলা নয় তাই ডিসিআর। যেমন হাট, বাজার, জলাশয়, জলমহাল ইত্যাদির ইজারা বা বন্দোবস্ত প্রদানের রশিদ।
B.S(Bangladesh survey)– বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই জরিপের কাজ সমাপ্ত হলেও কিছু কিছু এলাকায় আইনী জটিলতায় এখনো এই জরিপ শেষ হয় নাই। সেমতে এটি এখন চলমান জরিপ।
Mutition বা জমা খারিজ- জমিন সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সাম্প্রতিক মালিকের নামে হালনাগাদ করাকে মিউটেশন বা জমা খারিজ বলে। ক্রয়কৃত ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে করা হয়।
খতিয়ান ও পরচা- ভুমির হিসাব যখন সরকারের রেজিষ্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত থাকে তখন তাকে খতিয়ান এবং ব্যক্তির নিকট থাকে তখন পরচা বলে। উভয় ক্ষেত্রে একই বিষয় উল্লেখ থাকে। খতিয়ানের নকলই পরচা।
দাখিলা- ভুমির খাজনা পরিশোধপত্রকে দাখিলা বলে। ১৯৭২ সাল থেকে ২৫ বিঘা পর্যন্ত ভুমি মালিকানার খাজনা মওকুফ হলে ভুমির দখল স্বত্ব নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ১৯৮২ সালে এক সামরিক ফরমান বলে খাজনার পরিবর্তে একই হারে ভুমি উন্নয়ন কর ধার্য করা হয়। উন্নয়ন কর পরিশেধের রশিদের নাম দাখিলা।
সায়রাত মহাল- যে যে ভুমির জন্য ডিসিআর প্রদেয় তা সায়রাত মহাল। যেমন- বাজার, ঘাট, জলমহাল, বালুমহাল ইত্যাদি।

দলিলে বহুল ব্যবহৃত কিছু সংক্ষিপ্ত শব্দের পূর্ণরূপঃ

সাং = সাকিন, সাকিম। সাকিন বা সাকিম শব্দের অর্থ ঠিকানা, বাসস্থান।
গং = অন্যরা, সমূহ। অমুক [ব্যক্তিনাম] ও অন্যান্য বা তার সহযোগীগণ।
দং = দরুন, বাবদ, দখল।
মোং = মোকাম। এর অর্থ আবাস, বাসস্থান হলেও মূলত বাণিজ্য স্থান।
কিঃ = কিস্তি। কিন্তু শব্দটি দফা, বার, ক্ষেপ এই অর্থেও ব্যবহূত হয়।
এজমালি/ইজমালি = যৌথ, সংযুক্ত, বহুজনের একত্রে।যেমন: এজমালি সম্পত্তি বলতে যৌথ মালিকাধীন সম্পত্তিকে বোঝায়।
কিত্তা/ কিতা = আরবি ‘ক্বত্বহ’ শব্দজাত। এর অর্থ অংশ, জমির ভাগ, পদ্ধতি।
ছানি = আরবি শব্দ, অর্থ দ্বিতীয়বার। পুনর্বিবেচনার প্রার্থনা। যেমন: ছানি মামলা।
নিম = ফারসি শব্দ। এর অর্থ অল্প, অর্ধেক, অধস্তন বা অধীন ইত্যাদি।
ছোলেনামা = মীমাংসা, আপোষ/আপস। ছোলেনামা মানে আপস-মীমাংসাপত্র।
জঃ = জমা। সাধারণ অর্থে ‘জমা’ বলতে সঞ্চিত, রাশীকৃত।
নং = নম্বর বা সংখ্যা অর্থে বোঝানো হয়।
পঃ = পঞ্চম বা পাঁচের স্থানীয় ভাষ্য।
পোঃ = পোস্ট অফিস।
মহঃ = মহকুমা।
মুসাবিদা = খসড়া তৈরি করা। মুসাবিদাকারক মানে যিনি দলিল লেখেন।
হিঃ = হিসাব শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ
চৌঃ = চৌহদ্দি। চৌহদ্দি শব্দের অর্থ হচ্ছে চারধারের সীমানা।
তঃ/তপঃ = তফসিল, তহশিল।
তামাদি = ফারসি শব্দ। এর অর্থ নির্ধারিত সময়সীমা।
বিতং = বিস্তারিত বিবরণ, কৈফিয়ত, বৃত্তাত অর্থে ব্যবহূত হয়।
মাং/ মাঃ = মারফত। মারফত মানে মাধ্যম, অর্থাৎ যার হাত দিয়ে বা মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হয়।
সহঃ = সহকারী, যিনি কাজে সহযোগিতা করেন।
সুদিখত = একশ্রেণীর বন্ধকী দলিল।
তমঃ = তমসুক। আরবি শব্দজাত, যার অর্থ দলিল, ঋণ-স্বীকারপত্র বা খত। অর্থাৎ কর্জ গ্রহীতা যে লিখিত পত্র, বিশেষত সরকারি স্ট্যাম্প বা কাগজমূলে কর্জদাতার কাছ থেকে টাকা ধার নেয়। বন্ধকী তমসুক মানে হলো বন্ধকনামা বা বন্ধকী বা বন্ধকী খত।
হলফ = সত্য বলার জন্য যে শপথ করা হয়। হলফকারী মানে যিনি সত্যায়ন করেন।
খারিজ = সাধারণ অর্থে বাতিল করা হয়েছে এমন বোঝায়। ভূমি আইনে একজনের নাম থেকে অন্যজনের নামে জমির মালিকানা পরিবর্তন করে নেওয়াকে বোঝায়।
মৌরাশি: পুরুষানুক্রমে কোনো ভূমি ভোগ দখল করাকে মৌরাশি বলে।
বায়া (Vender): বিক্রেতা, বিক্রেতার সম্পাদিত দলিলকে বলে বায়া দলিল।

খতিয়ান,সি এস খতিয়ান,এস এ খতিয়ান,আর এস খতিয়ান,বি এস খতিয়ান,পর্চা,চিটা,দখলনামা,বয়নামা,জমাবন্দি,দাখিলা,হুকুমনামা,জমা খারিজ,মৌজা কি?
=খতিয়ানঃ
মৌজা ভিত্তিক এক বা একাদিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্ত্তত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভূমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম, জমির দাগ নং, পরিমাণ, প্রকৃতি, খাজনার হার ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের খতিয়ানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তন্মধ্যে সিএস, এসএ এবং আরএস উল্লেখযোগ্য।
=সি এস খতিয়ানঃ
১৯১০-২০ সনের মধ্যে সরকারি আমিনগণ প্রতিটি ভূমিখণ্ড পরিমাপ করে উহার আয়তন, অবস্থান ও ব্যবহারের প্রকৃতি নির্দেশক মৌজা নকশা এবং প্রতিটি ভূমিখন্ডের মালিক দখলকারের বিররণ সংবলিত যে খতিয়ান তৈরি করেন সিএস খতিয়ান নামে পরিচিত।
=এস এ খতিয়ানঃ
১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাসের পর সরকার জমিদারি অধিগ্রহণ করেন। তৎপর সরকারি জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে মাঠে না গিয়ে সিএস খতিয়ান সংশোধন করে যে খতিয়ান প্রস্তুত করেন তা এসএ খতিয়ান নামে পরিচিত। কোনো অঞ্চলে এ খতিয়ান আর এস খতিয়ান নামেও পরিচিত। বাংলা ১৩৬২ সালে এই খতিয়ান প্রস্তুত হয় বলে বেশির ভাগ মানুষের কাছে এসএ খতিয়ান ৬২র খতিয়ান নামেও পরিচিত।
আর এস খতিয়ানঃ
একবার জরিপ হওয়ার পর তাতে উল্লেখিত ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য পরবর্তীতে যে জরিপ করা হয় তা আরএস খতিয়ান নামে পরিচিত। দেখা যায় যে, এসএ জরিপের আলোকে প্রস্তুতকৃত খতিয়ান প্রস্তুতের সময় জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে তদন্ত করেনি। তাতে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়ে গেছে। ওই ত্রুটি বিচ্যুতি দূর করার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিনে ভূমি মাপ-ঝোঁক করে পুনরায় খতিয়ান প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই খতিয়ান আরএস খতিয়ান নামে পরিচিত। সারাদেশে এখন পর্যন্ত তা সমাপ্ত না হলেও অনেক জেলাতেই আরএস খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি আমিনরা মাঠে গিয়ে সরেজমিনে জমি মাপামাপি করে এই খতিয়ান প্রস্তুত করেন বলে তাতে ভুলত্রুটি কম লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় এই খতিয়ান বি এস খতিয়ান নামেও পরিচিত।
=বি এস খতিয়ানঃ
সর্ব শেষ এই জরিপ ১৯৯০ সা পরিচালিত হয়। ঢাকা অঞ্চলে মহানগর জরিপ হিসাবেও পরিচিত।
=দাগঃ
দাগ শব্দের অর্থ ভূমিখ-। ভূমির ভাগ বা অংশ বা পরিমাপ করা হয়েছে এবং যে সময়ে পরিমাপ করা হয়েছিল সেই সময়ে ক্রম অনুসারে প্রদত্ত ওই পরিমাপ সম্পর্কিত নম্বর বা চিহ্ন। সরেজমিনে জরিপ করার পর আমিন বা জমি পরিমাপকারী সর্ব প্রথম গ্রামের চতুঃসীমা নির্ধারণ করেন এবং গ্রামের প্রতিটি ভূমিখ-
পরিমাপ করে তার অবস্থান ওই গ্রামের প্রস্তুয়মান নকশায় প্রদর্শন করার জন্য সংখ্যায়িত করেন। এভাবে নকশায় প্রদর্শিত প্রতিটি ভূমিখন্ডের সংখ্যাকে দাগ নম্বর বলে। দাগকে কোথাও কিত্তা বলা হয়।
=পর্চা কীঃ
ভূমি জরিপকালে প্রস্তুতকৃত খসরা খতিয়ান যে অনুলিপি তসদিক বা সত্যায়নের পূর্বে ভূমি মালিকেরনিকট বিলি করা হয় তাকে মাঠ পর্চা বলে। রাজস্ব অফিসার কর্তৃক পর্চা সত্যায়িত বা তসদিক হওয়ার পর আপত্তি এবং আপিল শোনানির শেষে খতিয়ান চুরান্তভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর ইহার অনুলিপিকে পর্চা বলা হয়।
=চিটাঃ
একটি ক্ষুদ্র ভূমির পরিমাণ, রকম ইত্যাদির পূর্ণ বিবরণ চিটা নামে পরিচিত। বাটোয়ারা মামলায় প্রাথমিক ডিক্রি দেয়ার পর তাকে ফাইনাল ডিক্রিতে পরিণত করার আগে অ্যাডভোকেট কমিশনার সরেজমিন জমি পরিমাপ করে প্রাথমিক ডিক্রি মতে সম্পত্তি এমনি করে পক্ষদের বুঝায়ে দেন। ওই সময় তিনি যে খসড়া ম্যাপ প্রস্তুত করেন তা চিটা বা চিটাদাগ নামে পরিচিত।
=দখলনামাঃ
দখল হস্তান্তরের সনদপত্র।সার্টিফিকেট জারীর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি কোনো সম্পত্তি নিলাম খরিদ করে নিলে সরকার পক্ষ সম্পত্তির ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে দেয়ার পর যে সনদপত্র প্রদান করেন তাকে দখলনামা বলে।সরকারের লোক সরেজমিনে গিয়ে ঢোল পিটিয়ে, লাল নিশান উড়ায়ে বা বাঁশ গেড়ে দখল প্রদান করেন। কোনো ডিক্রিজারির ক্ষেত্রে কোনো সম্পত্তি নিলাম বিক্রয় হলে আদালত ওই সম্পত্তির ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে দিয়ে যে সার্টিফিকেট প্রদান করেন তাকেও দখলনামা বলা হয়। যিনি সরকার অথবা আদালতের নিকট থেকে কোনো সম্পত্তির দখলনামা প্রাপ্ত হন, ধরে নিতে হবে যে, দখলনামা প্রাপ্ত ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে দখল আছে।
=বয়নামাঃ
১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধির ২১ আদেশের ৯৪ নিয়ম অনুসারে কোনো স্থাবর সম্পত্তির নিলাম বিক্রয় চূড়ান্ত হলে আদালত নিলাম ক্রেতাকে নিলামকৃত সম্পত্তির বিবরণ সংবলিত যে সনদ দেন তা বায়নামা নামে পরিচিত। বায়নামায় নিলাম ক্রেতার নামসহ অন্যান্য তথ্যাবলি লিপিবদ্ধ থাকে। কোনো নিলাম বিক্রয় চূড়ান্ত হলে ক্রেতার অনুকূলে অবশ্যই বায়নামা দিতে হবে। যে তারিখে নিলাম বিক্রয় চূড়ান্ত হয় বায়নামায় সে তারিখ উল্লেখ করতে হয়।
=জমাবন্দিঃ
জমিদারি আমলে জমিদার বা তালুকদারের সেরেস্তায় প্রজার নাম, জমি ও খাজনার বিবরণী লিপিবদ্ধ করার নিয়ম জমাবন্দি নামে পরিচিত। বর্তমানে তহশিল অফিসে অনুরূপ রেকর্ড রাখা হয় এবং তা জমাবন্দি নামে পরিচিত।
=দাখিলাঃ
সরকার বা সম্পত্তির মালিককে খাজনা দিলে যে রশিদ প্রদান করা হয় তা দাখিলা বা খাজনার রশিদ নামে পরিচিত। দাখিলা কোনো স্বত্বের দলিল নয়, তবে তা দখল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বহন করে।
=হুকুমনামাঃ
আমলনামা বা হুকুমনামা বলতে জমিদারের কাছ থেকে জমি বন্দোবস্ত নেয়ার পর প্রজার স্বত্ব দখল প্রমাণের দলিলকে বুঝায়। সংক্ষেপে বলতে গেলে জমিদার কর্তৃক প্রজার বরাবরে দেয়া জমির বন্দোবস্ত সংক্রান্ত নির্দেশপত্রই আমলনামা।
=জমা খারিজ কিঃ
জমা খারিজ অর্থ যৌথ জমা বিভক্ত করে আলাদা করে নতুন খতিয়ান সৃষ্টি করা। প্রজার কোন জোতের কোন জমি হস্তান্তর বা বন্টনের কারনে মূল খতিয়ান থেকে কিছু জমি নিয়ে নুতন জোত বা খতিয়ান খোলাকে জমা খারিজ বলা হয়।
=মৌজা কিঃ
ক্যাডষ্টাল জরিপের সময় প্রতি থানা এলাকাকে অনোকগুলো এককে বিভক্ত করে প্রত্যেকটি একক এর ক্রমিক নং দিয়ে চিহ্নিত করে জরিপ করা হয়েছে। থানা এলাকার এরুপ প্রত্যেকটি একককে মৌজা বলে। এক বা একাদিক গ্রাম বা পাড়া নিয়ে একটি মৌজা ঘঠিত হয়।
সার্ভে ও সেটেলমেন্ট সংক্রান্ত কতিপয় শব্দ বা পদের ব্যাখ্যা:
এওয়াজ (By virtue of exchange): সমপরিমান কোন ভূমি বা জিনিসের বদলে সমপরিমান কোন ভূমি বা জিনিস প্রাপ্ত হলে তাকে এওয়াজ সূত্রে প্রাপ্ত বলা হয়। ইহাকে বদল সূত্র ও বলে।
অছিয়তনামা: যদি কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পূর্বে তাহার ওয়ারিশ বা আত্মীয়-স্বজনকে তদীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বাটোয়ারা সম্পর্কে দলীল মূলে কোন নির্দেশ দিয়ে যান, তবে তাকে অছিয়তনামা বলে। হিন্দু ধর্মে ইহাকে উইল বলে।
খায় খালাসী রেহেন (Usufructuary Mortgage): নির্দিষ্ট মেয়াদে জমি বন্ধক দিয়ে টাকা কর্জ করত: উক্ত জমির ফসলের দ্বারা কর্জ পরিশোধ হয়ে গেলে তাকে খায় খালাসী রেহেন বলে। খায় খালাসী মানে খেয়ে দেয়ে শোধ বা মুক্ত করে দেয়া।
চৌহদ্দি (Boundary): সীমানা। কোন নির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির চারপাশে যা কিছু রয়েছে (জমিজমা, পুকুর,স্থাপনা,মালিকের নাম এবং সম্পত্তির বিবরণসহ) তাই চৌহদ্দি।
নামজারি (Mutation): জমির মালিকানা পরিবর্তিত হলে পুরাতন মালিকের স্থলে নতুন মালিকের নাম প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াকেই নামজারি বলে।
দিয়ারা : পলিমাটি দ্বারা গঠিত চর। দরিয়া থেকে দিয়ারা শব্দ এসেছে। চরের জমি জরিপ করার জন্য দিয়ারা জরিপ করা হয়।
নক্সা (Map): ম্যাপ বা নকশা বলতে অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ র্নিণয় করে ভূমির অবিকল প্রতিচ্ছবিকে বুঝায়।
নামজারী: ভূম্যধিকারীর সরকারের সাবেক নামের পরিবর্তে খরিদ্দার অথবা ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত ব্যক্তির নাম রেজিষ্ট্রী করাকে নামজারী বলে।
নাম খারিজ ও জমা খারিজ: ১৬ আনা জোতের মোট জমা হতে নামজারী কৃত ওয়ারিশ বা খরিদ্দারের দখলীয় জমির জমা ১৬ আনা জমা হার অনুসারে জমা ভাগ করে দিয়ে পৃথক জমা সৃষ্টি করাকে নাম খারিজ বা জমা খারিজ বলে।
পাট্টা: প্রজার স্বত্ব ও দায়িত্ব বর্নণা করে মালিক প্রজাকে যে দলিল দিয়ে থাকেন তাকে পাট্টা বলে।
বাঁটওয়ারা (Partition): বন্টন।
মৌজা: গ্রাম বা শহরকে এতোদুদ্দেশ্যে মৌজা বলা হয়। যেমন, ঢাকা শহর মৌজা, ময়মনসিংহ শহর মৌজা ইত্যাদি।
ভূমি: সাধারণভাবে সকল আবাদী ও অনাবাদী ভূমি এবং নদ-নদী, খাল-বিল, নালা, পুকুর, ডোবা, বাড়ীঘর যাহা ভূমির সঙ্গে স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়েছে ইত্যাদি ভূমি বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু সাগর বা উপ-সাগরকে ভূমি বলে গণ্য করা হয়না।
দাগ (Plot): ভূমির বিবরণ, হিসাব সংরক্ষণ ও পরিচিতির জন্য জরিপ বিভাগ দেশের সমুদয় ভূমিকে আকারে ও পরিমাণে খন্ডে খন্ডে বা অংশে বিভক্ত করেছেন। এই সকল ভূমি খণ্ডাংশের প্রত্যেকটিকে ‘দাগ’ এবং ইংরেজিতে প্লট বলা হয়।
খতিয়ান: খতিয়ানের অর্থ হলো হিসাব। সাধারণভাবে স্বত্ব সংরক্ষণ ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে জরিপ-বিভাগ কর্তৃক প্রত্যেক মৌজার ভূমির মালিক বা মালিকগণের নাম, ঠিকানা, হিস্যা (অংশ) এবং তাদের স্বত্বাধীন দাগ বা বিবরণসমূহের নম্বরসহ ভূমির পরিমান, শ্রেণী, ইহাদের জন্য দেয় খাজনা ইত্যাদি বিবরণসহ ক্রমিক সংখ্যা অনুসারে যে স্বত্ব তালিকা বা স্বত্বের রেকর্ড প্রস্তুত করা হয় ইহাদের প্রত্যেকটিকে খতিয়ান বলা হয় এবং উক্ত রেকর্ডকে স্বত্বের ‘রেকর্ড অব রাইট’ (ROR) বলা হয়।
এক বা একাধিক দাগের সর্ম্পূণ বা আংশিক পরিমান ভূমি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যে ভূমি-স্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে ‘খতিয়ান’ বলে। খতিয়ানগুলি ১,২,৩,৪ ইত্যাদি ক্রমিক সংখ্যা দ্বারা সাজানো হয়ে থাকে। প্রত্যেক খতিয়ানের একটি সংখ্যা রয়েছে। ইহাদেরকে খতিয়ান নম্বর বলা হয়। প্রত্যেক মৌজায় খতিয়ান এক (১) হতে শুরু হয়। কোন কোন মৌজায় কয়েক হাজারের বেশী খতিয়ান নম্বর থাকতে পারে। কোন মৌজায় কত সংখ্যক খতিয়ান রয়েছে, তাহা উক্ত স্বত্বের রেকর্ড এ (ROR) পাওয়া যাবে।
প্রত্যেক মৌজার ১নং খতিয়ানটিকে ‘খাস-খতিয়ান’ বলা হয়।বাংলাদেশ সরকারের ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংষ্কার মন্ত্রণালয়ের স্বত্বাধীন সমূদয় ভূমি যথা-হাট বাজার, খাল-বিল, রাস্তা-ঘাট এবং অন্যান্য কৃষি ও অকৃষি ভূমি উক্ত ১ নং খতিয়ানের অন্তভূর্ক্ত হয়ে থাকে এবং সরকারের পক্ষে ‘কালেক্টর’ হিসাবে উক্ত ১ নং খতিয়ানে লিখনভূক্ত হয়ে থাকে।
খতিয়ানের তালিকায় নিম্নলিখিত বিষয়াদি লেখা থাকে, যেমন-
খতিয়ানের ক্রমিক নম্বর
মালিক বা মালিকগণের নাম ও তাদের পিতা কিংবা স্বামীর নাম এবং মালিকের পূর্ণ বিবরণ।
মালিক বা মালিকগণের অংশ।
দাগ নম্বর।
দাগের ভূমির শ্রেণী
দাগের ভূমির পরিমান
দাগের মধ্যে অত্র খতিয়ানের হিস্যা
দাগের মধ্যে অত্র খতিয়ানের জমির পরিমান
রাজস্ব
মন্তব্য
জেলার নাম
থানার নাম
মৌজা বা উপজেলার নাম
জে.এল নং
তৌজি নং ইত্যাদি
হাল খতিয়ান নম্বর: কোন এলাকায় সর্বশেষ জরিপে খতিয়ানের রেকর্ড প্রস্তুত হওয়ার পর সরকার কর্তৃক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে ঘোষিত হয়ে বর্তমানে চালু আছে, এইরূপ খতিয়ানসমূহকে ‘হাল-খতিয়ান’ বলা হয়।
সাবেক খতিয়ান নম্বর: যে সকল খতিয়ান হাল খতিয়ান চালু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চালু ছিল এবং বর্তমানে চালু নেই এইরূপ খতিয়ানসমূহে ‘সাবেক খতিয়ান’ বলা হয়। এই সাবেক খতিয়ানগুলি ভূমির ধারাবাহিক পরিচিতির জন্য প্রয়োজন। ইহা ছাড়া, সাবেক খতিয়ানগুলি হাল-খতিয়ান হিসেবে চালু থাকা কালে সম্পাদিত সকল দলিল, মামলা-মোকদ্দমার রায়ে, ডিক্রিতে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে এই খতিয়ানগুলি লেখা হয়েছিল। হাল-খতিয়ান চালু হওয়ার পূর্বেকার সম্পাদিত দলিল-দস্তাবেজ ও রায়ে উল্লেখিত খতিয়ানগুলি, যাহা সাবেক খতিয়ানে পরিণত হয়েছে, তাহা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।সংশ্লিষ্ট দলিল-দস্তাবেজে সাবেক খতিয়ান নং বহাল থাকায় এইগুলির গুরুত্ব বিশেষভাবেই অপরিসীম।
“নামজারির” বিভিন্ন ধাপ
নামজারি” কাকে বলে?
ক্রয়সূত্রে/উত্তরাধিকার সূত্রে অথবা যেকোন সূত্রে জমির নতুন মালিক হলে নতুন মালিকের নাম সরকারি খতিয়ানভুক্ত করার প্রক্রিয়াকে নামজারী বলা হয়। কিন্তু নিজ নাম খতিয়ানভূক্ত করার পক্রিয়াটি পদ্ধতিগত। পদ্ধতি জানা না থাকলে আপনি জমির দখলকার বা মালিক হওয়া স্বত্বে সরকারি রেকর্ডে আপনার নাম নেই। ফলে সৃষ্টি ভূমি বিরোধ এবং মামলা-হামলা সহ নানান জটিলতা। তাই, আপনার জমির নামজারি খতিয়ান করে নিন সর্বাগ্রে। নিম্মে নামজারির সহজ পদ্ধতি ছক আকারে দেওয়া হল;
জেনে নিন: নামজারি, পর্চা, দাগ, খতিয়ান, মৌজা, তফসিল, জমা খারিজ, খাজনা, দাখিলা, DCR, কবুলিয়ত, ফারায়েজ, ওয়ারিশ, সিকস্তি, পয়ন্তি, দলিল কাকে বলে?
City-jorip-porcha
“নামজারি” কাকে বলে?
ক্রয়সূত্রে/উত্তরাধিকার সূত্রে অথবা যেকোন সূত্রে জমির নতুন মালিক হলে নতুন মালিকের নাম সরকারি খতিয়ানভুক্ত করার প্রক্রিয়াকে নামজারী বলা হয়।
“জমা খারিজ”কাকে বলে?
যৌথ জমা বিভক্ত করে আলাদা করে নতুন খতিয়ান সৃষ্টি করাকে জমা খারিজ বলে। অন্য কথায় মূল খতিয়ান থেকে কিছু জমির অংশ নিয়ে নতুন জোত বা খতিয়ান সৃষ্টি করাকে জমা খারিজ বলে।
“খতিয়ান” কাকে বলে?
ভূমি জরিপকালে ভূমি মালিকের মালিকানা নিয়ে যে বিবরণ প্রস্তুত করা হয় তাকে “থতিয়ান” বলে। খতিয়ান প্রস্তত করা হয় মৌজা ভিত্তিক। আমাদের দেশে CS, RS, SA এবং সিটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এসব জরিপকালে ভূমি মালিকের তথ্য প্রস্তত করা হয়েছে তাকে “খতিয়ান” বলে। যেমন CS খতিয়ান, RS খতিয়ান।“পর্চা” কাকে বলে?
ভূমি জরিপকালে চূড়ান্ত খতিয়ান প্রস্তত করার পূর্বে ভূমি মালিকদের নিকট খসড়া খতিয়ানের যে অনুলিপি ভুমি মালিকদের প্রদান করা করা হ তাকে “মাঠ পর্চা” বলে। এই মাঠ পর্চা রেভিনিউ/রাজস্ব অফিসার কর্তৃক তসদিব বা সত্যায়ন হওয়ার পর যদি কারো কোন আপত্তি থাকে তাহলে তা শোনানির পর খতিয়ান চুড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হয়। আর চুড়ান্ত খতিয়ানের অনুলিপিকে “পর্চা” বলে।“মৌজা” কাকে বলে?
যখন CS জরিপ করা হয় তখন থানা ভিত্তিক এক বা একাধিক গ্রাম, ইউনিয়ন, পাড়া, মহল্লা অালাদা করে বিভিন্ন এককে ভাগ করে ক্রমিক নাম্বার দিয়ে চিহ্তি করা হয়েছে। আর বিভক্তকৃত এই প্রত্যেকটি একককে মৌজা বলে।“তফসিল” কাকে বলে?
জমির পরিচয় বহন করে এমন বিস্তারিত বিবরণকে “তফসিল” বলে। তফসিলে, মৌজার নাম, নাম্বার, খতিয়ার নাম্বার, দাগ নাম্বার, জমির চৌহদ্দি, জমির পরিমাণ সহ ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশ থাকে।“দাগ” নাম্বার কাকে বলে?যখন জরিপ ম্যাপ প্রস্তুত করা হয় তখন মৌজা নক্সায় ভূমির সীমানা চিহ্নিত বা সনাক্ত করার লক্ষ্যে প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে আলাদা আলাদ নাম্বার দেয়া হয়। আর এই নাম্বারকে দাগ নাম্বার বলে। একেক দাগ নাম্বারে বিভিন্ন পরিমাণ ভূমি থাকতে পারে। মূলত, দাগ নাম্বার অনুসারে একটি মৌজার অধীনে ভূমি মালিকের সীমানা খূটিঁ বা আইল দিয়ে সরেজমিন প্রর্দশন করা হয়।“ছুটা দাগ” কাকে বলে?
ভূমি জরিপকালে প্রাথমিক অবস্থায় নকশা প্রস্তুত অথবা সংশোধনের সময় নকশার প্রতিটি ভূমি এককে যে নাম্বার দেওয়া হয় সে সময় যদি কোন নাম্বার ভুলে বাদ পড়ে তাবে ছুটা দাগ বলে। আবার প্রাথমিক পর্যায়ে যদি দুটি দাগ একত্রিত করে নকশা পুন: সংশোধন করা হয় তখন যে দাগ নাম্বার বাদ যায় তাকেও ছুটা দাগ বলে।
“খানাপুরি” কাকে বলে?
জরিপের সময় মৌজা নক্সা প্রস্তুত করার পর খতিয়ান প্রস্তুতকালে খতিয়ান ফর্মের প্রত্যেকটি কলাম জরিপ কর্মচারী কর্তৃক পূরন করার প্রক্রিয়াকে খানাপুরি বলে।
“আমিন” কাকে বলে?
ভূমি জরিপের মাধ্যমে নক্সা ও খতিয়ান প্রস্তত ও ভূমি জরিপ কাজে নিজুক্ত কর্মচারীকে আমিন বলে।
“কিস্তোয়ার” কাকে বলে?
ভূমি জরিপ কালে চতুর্ভুজ ও মোরব্বা প্রস্তত করার পর সিকমি লাইনে চেইন চালিয়ে সঠিকভাবে খন্ড খন্ড ভুমির বাস্তব ভৌগলিক চিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে নকশা প্রস্তুতের পদ্ধতিকে কিস্তোয়ার বলে।
“খাজনা” ককে বলে?
সরকার বার্ষিক ভিত্তিতে যে প্রজার নিকট থেকে ভূমি ব্যবহারের জন্য যে কর আদায় করে তাকে খাজনা বলে।
“দাখিলা” কাকে বলে?
ভূমি কর/খাজনা আদায় করে যে নির্দিষ্ট ফর্মে ( ফর্ম নং১০৭৭) ভূমি কর/খাজনা আদায়ের প্রমান পত্র বা রশিদ দেওয়া হয় তাকে দাখিলা বলা হয়।
DCR কাকে বলে?
ভূমি কর ব্যতিত আন্যান্য সরকারি পাওনা আদায় করার পর যে নির্ধারিত ফর্মে (ফর্ম নং ২২২) রশিদ দেওয়া হয় তাকে DCR বলে।
“কবুলিয়ত” কাকে বলে?
সরকার কর্তৃক কৃষককে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রস্তাব প্রজা কর্তৃক গ্রহণ করে খাজনা প্রদানের যে অঙ্গিকার পত্র দেওয়া হয় তাকে কবুলিয়ত বলে।
“ফারায়েজ” কাকে বলে?
ইসলামি বিধান মোতাবেক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন করার নিয়ম ও প্রক্রিয়াকে ফারায়েজ বলে।
“ওয়ারিশ” কাকে বলে?
ওয়ারিশ অর্থ উত্তরাধিকারী । ধর্মীয় বিধানের অনুয়ায়ী কোন ব্যক্তি উইল না করে মৃত্যু বরন করলেতার স্ত্রী, সন্তান বা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে যারা তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মালিক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে ওয়ারিশ বলে।
“সিকস্তি” কাকে বলে?
নদী ভাংঙ্গনের ফলে যে জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায় তাকে সিকন্তি বলে। সিকন্তি জমি যদি ৩০ বছরের মধ্যে স্বস্থানে পয়ন্তি হয় তাহলে সিকন্তি হওয়ার প্রাক্কালে যিনি ভূমি মালিক ছিলেন তিনি বা তাহার উত্তরাধিকারগন উক্ত জমির মালিকানা শর্ত সাপেক্ষ্যে প্রাপ্য হবেন।
“পয়ন্তি” কাকে বলে?
নদী গর্ভ থেকে পলি মাটির চর পড়ে জমির সৃষ্টি হওয়াকে পয়ন্তি বলে।
“দলিল” কাকে বলে?
যে কোন লিখিত বিবরণ আইনগত সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য তাকে দলিল বলা হয়। তবে রেজিস্ট্রেশন আইনের বিধান মোতাবেক জমি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য যে চুক্তিপত্র সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করেন সাধারন ভাবেতাকে দলিল বলে।
ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) সংক্রান্ত বিধানবলি

→ভূমি উন্নয়ন কর/খাজনা কি?
কোনো জমি ভোগ দখলের সুবিধা গ্রহণের জন্য সরকারকে প্রতি শতাংশ জমির জন্য প্রতি বছর যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদান করতে হয় তাকেই ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা বলে ৷

♦খাজনা সংক্রান্ত অধিকার
→খাজনা প্রদান করে দাখিলা গ্রহণের অধিকার ৷
→খাজনা প্রদান করে দাখিলার মাধ্যমে জমির মালিকানা প্রমাণের অধিকার ৷
→যদি কোনো ব্যক্তি খাজনা সংক্রান্ত ব্যাপারের কোন আদেশে অসন্তুষ্ট হন সেক্ষেত্রে আপিলের অধিকার ৷
(১৯৭৬ সালের ভুমি উন্নয়ন কর বিধিমালার ৭ বিধি)
→রেন্ট সার্টিফিকেট মামলা হওয়ার আগে নোটিশ পাবার অধিকার (যেমন ডাকযোগে/প্রকাশ্য স্থানে লটকানোর মাধ্যমে/সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির উপর টাঙ্গানোর মাধ্যমে। (১৯৭৬ সালের ভুমি উন্নয়ন কর বিধিমালার ৬ বিধি)

♦কোন কোন ক্ষেত্রে বিনা খাজনাতে ভোগ দখলের অধিকার:
(১৯৭৬ সালের ভুমি উন্নয়ন কর বিধিমালা)
(ক) ২৫ বিঘার কম জমি থাকলে ৷
(খ) ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী পর্যায়ে নিজে শারীরিক পরিশ্রম করে হাঁস-মুরগীর খামার/ডেইরী ফার্ম হিসাবে কোন জমি ব্যবহার করলে ৷
(গ) ৫টির কম হস্তচালিত তাঁত যদি কোন জমির উপর অবস্থিত হয় এবং তাঁতগুলি যদি জমির মালিক নিজে শারীরিক পরিশ্রম করে চালায় ৷
(ঘ) যদি কোনো জমি প্রধানত প্রার্থনার স্থান অথবা ধর্মীয় উপসনালয় অথবা সর্ব সাধারণের কবরস্থান/শশ্মান ঘাট হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে ৷

♦লঙ্ঘন:
→খাজনা প্রদানের পর দাখিলা/রশিদ প্রদান না করা ৷
→খাজনা প্রদান করে দাখিলার মাধ্যমে জমির মালিকানা প্রমাণে বাধা দেওয়া ৷
→২৫ বিঘার কম জমি থাকা স্বত্বেও খাজনা দাবী করা ৷
→খাজনা মওকুফের জন্য দরখাস্ত গ্রহণ না করা ।
→রেন্ট সার্টিফিকেট মামলা হওয়ার আগে নোটিশ প্রদান করা ৷

♦সংশ্লিষ্ট প্রতিকার:
→আপিলের মাধ্যমে ৷

♦প্রতিকারের জন্য কোথায় যেতে হবে?
→খাজনা প্রদান সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারে সমস্যা সৃষ্টি হলে থানা রাজস্ব কর্মকর্তা তথা সহকারী ভুমি কমিশনারের অফিসে যোগাযোগ করতে হবে ৷
(১৯৭৬ সালের ভুমি উন্নয়ন কর বিধিমালার ৭ বিধি)

♦আপিলের সুযোগ আছে কি?
→আছে ৷
খাজনা বা ভুমি উন্নয়ন কর সংক্রান্ত কোনো প্রাথমিক দাবী সম্পর্কে কোনো ব্যক্তির বা ভুমি মালিকের কোনো আপত্তি থাকলে আপত্তি দাখিল করা যাবে ৷ (১৯৭৬ সালের ভুমি উন্নয়ন কর বিধিমালার ৭ বিধি)
কোথায় আপত্তি দাখিল করতে হবে?
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অথবা জেলা প্রশাসক (ডি.সি.) এর নিকট ৷

♦কতদিনের মধ্যে?
→১৫ দিনের মধ্যে ৷
জেলা প্রশাসকের আদেশে কোনো ব্যক্তি সন্তুষ্ট না হলে সেই আদেশের বিরূদ্ধেও আপিল করা যাবে ৷
আপিলের জন্য কোথায় যেতে হবে?
বিভাগীয় কমিশনারের নিকট

♦কতদিনের মধ্যে?
→৪৫ দিনের মধ্যে
বিভাগীয় কমিশনারের আদেশে কোন ব্যক্তি সন্তুষ্ট না হলে সেই আদেশের বিরূদ্ধেও আপিল করা যাবে ৷

♦আপিলের জন্য কোথায় যেতে হবে?
→ভুমি আপিল বোর্ডের নিকট ৷

♦কতদিনের মধ্যে?
→১৫ দিনের মধ্যে

Dolil Lekhok o Vumi Poramoshok - Posts | Facebook

One comment

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s